- শীতকালে জলাশয়ের জলে জৈব উপাদান বেড়ে কিউলেক্স মশার প্রজনন বৃদ্ধি
- গ্রীষ্মের আগেই মশার ঘনত্ব সর্বোচ্চ সীমায়, প্রতিটি ফাঁদে গড়ে ৪২০টি মশা
- রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় মশার উপদ্রব বেড়ে যাওয়ায় অতিষ্ঠ নগরবাসী
- সিটি করপোরেশনগুলোর মশক নিধন কার্যক্রম যথেষ্ট নয় বলে অভিযোগ
- সিটি করপোরেশন জলাশয় পরিষ্কার ও লার্ভিসাইড ব্যবহার নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হলে মশার উপদ্রব কমবে না
গ্রীষ্মকাল আসার আগেই রাজধানীতে কিউলেক্স মশার ঘনত্ব বেড়ে গেছে। মশার যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ নগরবাসী বলছেন, মশা নিধনে দুই সিটি করপোরেশনেরই তৎপরতা খুবই কম।
দুই নগর সংস্থাই অবশ্য দাবি করছে, মশা নিধনে কাজ করছেন তারা। যদিও এক গবেষণায় মশা বেড়ে যাওয়ার তথ্য আসায় করপোরেশনের ‘তৎপরতা’ কতটা কাজে দিচ্ছে তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
এই মশা শীতকালের শেষের দিকে ডোবা-নালা ও জলাশয়ে জমে থাকা পানিতে জৈব উপাদান বৃদ্ধির কারণে তীব্রভাবে প্রজনন ঘটায়। ফলে শীতকাল শেষ হওয়ার আগেই মশার ঘনত্ব বেড়ে গেছে সর্বোচ্চ সীমায়।
গবেষণায় দেখা গেছে, গত বছরের নভেম্বর মাসে মশার ঘনত্ব ছিল প্রতিটি ফাঁদে গড়ে ২০০টি, ডিসেম্বরে ২২৩টি, জানুয়ারিতে ৩০০টি, ফেব্রুয়ারিতে ৩৮৮টি এবং মার্চ মাসে প্রতিটি ফাঁদে ধরা পড়া মশার সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৪২০টি।
পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, মশার উপদ্রব সবচেয়ে বেশি মিরপুরে, তারপর সাভার, উত্তরা, যাত্রাবাড়ী ও দক্ষিণখান এলাকায়।
এ পর্যন্ত যে মশা ধরা পড়েছে, তার ৯৯ শতাংশই কিউলেক্স মশা। বাকি ১ শতাংশের মধ্যে এইডিস, অ্যানোফিলিস, আর্মিজেরিস ও ম্যানসোনিয়া মশা রয়েছে।
মশার ঘনত্ব বেড়ে যাওয়ার কারণ সম্পর্কে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. কবিরুল বাশার বলেছেন, “শীতকালে যখন বৃষ্টি থাকে না, তখন ড্রেন, ডোবা নর্দমার পানি ঘন হয়ে পানিতে জৈব উপাদান বেড়ে যায়। এ সময় কিউলেক্স মশার প্রচুর প্রজনন ঘটে; যে কারণে এ সময় মশা বেড়ে গেছে।
মশার উপদ্রব বেড়ে যাওয়ায় অতিষ্ঠ নগরবাসী। তাদের অভিযোগ, সিটি করপোরেশন মশা নিধনে তেমন কাজ করছে না।
বাড্ডার বাসিন্দা মনোয়ার হোসেন বলেছেন, “মশার উৎপাত থেকে বাঁচতে কয়েল, অ্যারোসল ব্যবহার করি। প্রায় সব ঘরেই মশা মারার ব্যাট রাখা হচ্ছে। কেউ কেউ মশা প্রতিরোধে বাসার জানালায় লোহার জালি যুক্ত করেছেন।”
মিরপুরের ধামালকোটের বাসিন্দা নাসরিন জাহান জানান, সন্ধ্যার আগে থেকেই তার এলাকায় মশার উপদ্রব শুরু হয়। সেজন্য বিকালেই বাসার জানালা বন্ধ দেন। তারপরও মশা থেকে বাঁচতে পারেন না।
রামপুরার কলেজছাত্রী লুৎফুন্নাহার বলেছেন, “রাস্তাঘাট সব জায়গাতেই মশা ঘিরে ধরে। এক মাস আগেও এমন ছিল না। সন্ধ্যার দিকে হয়ত একটু চা খেতে গেলাম বাইরে, উপরে আর চারপাশে ঘুরতেই থাকে।
বৃষ্টিপাত শুরু হলে মশার উপদ্রব কিছুটা কমবে বলে জানান অধ্যাপক কবিরুল বাশার।
জানতে চাইলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ফজলে কবীর বলেছেন, “দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকায় কিউলেক্স মশার উপদ্রব অন্য যে কোনো বছরের চেয়ে কম। আমরা নালা, ড্রেন, জলাশয় এগুলো নিয়মিত পরিষ্কার করে মশার ওষুধ স্প্রে করছি।”
আর ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেছেন, “ডিএনসিসি এরইমধ্যে মশক নিধনে অভিযান শুরু করেছে। আমরা বিষয়টি নিয়ে কাজ করছি। কিউলেক্স মশা নিধনে আমাদের সব ফোর্স কাজে লাগিয়েছি।”