সালাহউদ্দীন সুমন: সংবাদকর্মী থেকে কন্টেন্ট ক্রিয়েটরের যাত্রাপথ

  • সংবাদকর্মী থেকে কনটেন্ট ক্রিয়েটর হিসেবে পরিচিতি অর্জন
  • ইউটিউবে ১৮ লাখেরও বেশি সাবস্ক্রাইবার রয়েছে
  • বাংলাদেশের ইতিহাস, ভ্রমণ এবং তথ্যবহুল কন্টেন্ট তৈরি করেন
  • ইউটিউব থেকে প্রতি মাসে ৩ থেকে ১০ লাখ টাকা আয় করেন
  • চাকরির চেয়ে ইউটিউবিংকেই পুরো মনোযোগ দিতে পদত্যাগ করেন

সালাহউদ্দীন সুমন বগুড়ার ছেলে। সাংবাদিকতা পড়ার পাশাপাশি রাজশাহীতে কিছুদিন সাংবাদিকতাও করেছিলেন। পরবর্তীতে বেসরকারি টিভি চ্যানেলে প্রতিবেদক হিসেবে যোগদান করেন। সেখানে কাজ করার পাশাপাশি আয় বাড়ানোর জন্য কিছুটা চিন্তাভাবনা করতে শুরু করেন। সে সময় ইউটিউবের ভিডিও দেখতে দেখতে তার মনে হয়, কনটেন্ট ক্রিয়েটর হলে কেমন হয়? তিনি অনুধাবন করেন যে, তিনি লিখতে পারেন, ভিডিও তৈরি করতে পারেন, ভয়েসওভার দিতে পারেন এবং ভিডিও সম্পাদনাও করতে পারেন। তাই তিনি ভাবেন তিনি নিজের চ্যানেল খুলে কন্টেন্ট তৈরি করতে পারেন।

তিনি দুই মাস ধরে ইউটিউবের বিভিন্ন ভিডিও দেখেছেন। মানুষ কোন ধরনের ভিডিও দেখতে চায়, কোন বিষয়ে আগ্রহ বেশি, কোন বিষয়টা নিয়ে কম কাজ হয়েছে, কারা কেমন কাজ করছেন—সবকিছু নিয়ে অনেকটা গবেষণাই করেছেন তিনি। সেসময় তিনি বুঝতে পারেন যে, অনেকেই ভ্রমণবিষয়ক ভিডিও বানায়, তবে সেসব ভিডিওতে শুধুমাত্র কোনো স্থানের ইতিহাস বা তাৎপর্য বলা হয় না। এই ভাবনা থেকেই তার মাথায় আসে বাংলাদেশের ইতিহাস নিয়ে কিছু করার। সে সময় বাংলাদেশে সিরাজউদ্দৌলার এক বংশধরের অনেক আলোচনা হচ্ছিল। সুমন ভাবেন সিরাজউদ্দৌলার বংশধরদের তো সবাই জানেন, কিন্তু মীর জাফরের বংশের লোকজন এখন কোথায় আছেন, তাদের তো কেউই চেনে না। তিনি উদ্যোগ নিয়ে তাদের খোঁজখবর করেন। মুরশিদাবাদ গিয়ে সুমন জানতে পারেন যে তারা কারা এবং কোথায় বাস করেন। তিনি মির জাফরের বংশধরদের নিয়ে একটি ভিডিও তৈরি করেন এবং এটি ইউটিউবে প্রকাশ করেন। এই ভিডিওটি তাকে সফলতা এনে দেয় এবং তার চ্যানেলের সাবস্ক্রাইবার সংখ্যা তাত্ক্ষণিকভাবে ৭০ হাজার বেড়ে যায়।

ধীরে ধীরে তার আয় বাড়তে শুরু করে। একসময় তার ইউটিউব থেকে আয় তার বেতন ছাড়িয়ে যায়। কিন্তু তখন সপ্তাহে একটি ভিডিওই প্রকাশ করতেন সুমন। এর মধ্যেই সুমন যে চ্যানেলে কাজ করতেন, সেখান থেকে সব কর্মীকে জানানো হলো, টেলিভিশন সাংবাদিকতা এবং ইউটিউব চ্যানেলের জন্য একসঙ্গে কাজ করা যাবে না। এর মধ্যে যেকোনো একটি বেছে নিতে হবে। তখন সুমন যে বেতন পেতেন, তার চেয়েও বেশি আয় করতেন ইউটিউব থেকে। সিদ্ধান্ত নিলেন চাকরি ছেড়ে দেবেন। কিন্তু তার বাবা এ সিদ্ধান্তে একমত হতে পারছিলেন না। তিনি তাকে চাকরি ছেড়ে দেওয়ার জন্য বাধা দেন। কিন্তু সুমন নিজের সিদ্ধান্তে অটল থাকেন। অবশেষে চাকরিতে ইস্তফানামা দিয়ে ২০২১ সালের জুলাই মাসে তিনি টেলিভিশন চ্যানেলের চাকরিটি ছেড়ে দেন।

এরপর তার আন্তর্জাতিক একটি গণমাধ্যম থেকে ডাক আসে। সেখানে চাকরি করতে হলে ইউটিউবিং করা যাবে না, এমন কোন শর্ত ছিল না। কাজের সময়ও বেশ সুবিধাজনক ছিল। তারপরও ৯ মাস পর এই চাকরিও ছেড়ে দেন সুমন। তিনি বলেন, ‘নতুন চাকরিতে কোনো শর্ত ছিল না। কিন্তু আমার মনে হলো, আমি যদি ইউটিউবিংই করতে চাই, তাহলে চাকরির পাশাপাশি হবে না। এটায় পূর্ণ মনোযোগ দিতে হবে। তাই শেষ পর্যন্ত চাকরি ছেড়ে দিই। ২০২২ সালের মাঝামাঝি থেকে আমি পুরোপুরি কন্টেন্ট ক্রিয়েটর।’

তিনি বলেন যে, ইউটিউব থেকে তার আয় তার আগের চাকরির বেতনের চেয়ে ৭-৮ গুণ বেশি। প্রতি মাসে তার আয় সর্বনিম্ন ৩ লাখ টাকা থেকে শুরু করে সর্বাধিক ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে।

তিনি বলেন যে, ভবিষ্যতে তিনি কন্টেন্ট ক্রিয়েটর হিসেবেই কাজ চালিয়ে যেতে চান। তিনি আরও বলেন যে, তিনি একটি প্রোডাকশন হাউস গড়ে তুলতে চান। এ ছাড়া তিনি ‘সালাহউদ্দীন সুমন একাডেমি’ নামে একটি প্ল্যাটফর্ম থেকে অনলাইনে কন্টেন্ট ক্রিয়েশনের ওপর কোর্স করানোর পরিকল্পনা করেছেন।

যারা নতুন কন্টেন্ট ক্রিয়েটর হতে চান, তাদের উদ্দেশ্যে সুমন বলেন, ‘কন্টেন্ট ক্রিয়েটর হতে হলে নিজের সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা থাকতে হবে। কে কোন কাজ পছন্দ করেন, সেটা বুঝতে হবে। কেউ গান গাইতে পছন্দ করেন, কেউ রান্না করতে, কেউ মাছ ধরতে তো কেউ খাবারের রিভিউ করতে। যে যেটা পছন্দ করেন, সে ক্ষেত্রেই কাজ করা উচিত। তা না হলে কাজটা ভালো যেমন হবে না, সফলতাও আসবে না।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *